তৃষ্ণা বসাক
সেই একইভাবে বই পড়ছে মানব্রত। বিছানায় আধশোয়া হয়ে, বাঁ হাতের পাতায়
মুখ আর বইয়ের পাতায় সমস্ত মন রেখে। খোলা জানলা দিয়ে বৈশাখের চড়া
রোদ্দুর আসছে, কোনও হুঁশ নেই। বলতে গেলে টানা টানা চোখ মেলে বলবে
‘আলো পেতে গেলে তাপ তো লাগবেই।’ ধোঁয়া ধোঁয়া কথা শুনতে অসহ্য লাগবে
নমিতার।তার চেয়ে যদি লোকটা বলত, ‘আমি ২০ বছর ফার্নেসে কাজ করে
এসেছি। এটুকু তাপে আমার কিছু হ্য় না’- তবু ভাল লাগত শুনে। ভরসা পাওয়া
যেত এই ভেবে যাক লোকটা এখনও পুরোপুরি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়নি। মাটির
কাছেই আছে। হয়তো আবার একটি কাজে লাগবে, যে কোন একটা কাজ। এই ক
বছর কত কষ্টে আর অপমানে, নিজেকে ক্ষয় করে ওদের মুখে ভাত তুলে দিয়েছে
নমিতা, যা ভেবে গভীর অনুতাপ হবে মানব্রতের।
কিন্ত সে সবের ধারে কাছেও যায় না লোকটা। সারাদিন জানলার ধারে তক্তোপোশে
শুয়ে শুয়ে বই পড়ে। রোদ আসে, বৃষ্টি আসে, তবু জানলা বন্ধ করে না। তিনটে
বাজলেই ভনভন করে মশা ঢুকতে শুরু করে। সে সময় নমিতার ভীষণ তাড়া।
তিনটে পঁচিশের ট্রেন ধরবে। তাও, মুখে পাউডার বোলাতে বোলাতে, শাড়ির কুঁচি
ঠিক করতে করতে এ ঘরে দৌড়ে দৌড়ে এসে বন্ধ করে দেয় জানলাটা। নমিতার
ভারে ভাঙ্গা তক্তোপোশ মচমচ করে ওঠে। ঘরের একটিমাত্র আলোর উৎস নিভে
গেলে বুকের ওপর খোলা বই রেখে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থাকে মানব্রত। টিকিস
টিকিস করে বুড়ো পাখাটা ঘোরে। নমিতা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ওকে
ট্রেন ধরতে হবে। ও চলে গেলেই হয় মানব্রত জানলা খুলে ফেলবে কিংবা লাইট
জ্বালিয়ে বই পড়বে। মাসে মাসে ইলেক্ট্রিকের বিল তো ওকে মেটাতে হ্য় না। চোখ
ফেটে জল আসে নমিতার। ভাগ্যিস গত মাসে একটা ক্লায়েন্ট ওয়াটারপ্রুফ
আইলাইনার কিনে দিয়েছে, তাই ঘেঁটে যায় না।কিন্ত এভাবে আর কতদিন টানবে
নমিতা? সংসারের কত খরচ, তার ওপর মানব্রতর দামি দামি ওষুধ, বাবলার
চারটে মাস্টার। আর এই শরীরের খাঁই কি কম? নিত্য বিউটিপার্লার, মাসাজ,
বিদেশি কসমেটিক্স- অস্তরে রোজ শান না দিলেই মরচে পড়বে।কিন্ত সেও আর
কদিন? নমিতার এখনি একচল্লিশ চলছে। বড়জোর আর পাঁচ-ছ বছর। তারপর?
চোখ বুজে ভাতের হাঁড়ির শূন্যতা মাপার চেষ্টা করল নমিতা। যত হাত ঢোকায়,
তল খুঁজে পায় না, এত বড় ফাঁদ সে হাঁড়ির।
একরাতে এরকম একটা স্বপ্ন দেখে ঘেমে নেয়ে বিছানায় উঠে বসেছিল নমিতা।
পরের দিন মানব্রতকে বলতে অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল মানুষটা-
‘ইনফাইনাইট পোটেনশিয়াল ওয়েল’
আলাদা আলাদা করে শব্দগুলোকে যে নমিতা চেনে না, এমন তো নয়। সামনের
বছর মাধ্যমিক দেবে বাবলা। নমিতা সকালে রান্না করতে করতে এখনও তার
বানান ভুল শুধরে দেয়। বাংলা, ইংরেজি দুটোই। কিন্ত মানব্রত্র মুখের শব্দগুলো
একসঙ্গে তার কাছে কোনও মানে তৈরি করে না। চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে
থাকে সে। মানব্রত যত্ন করে বোঝায়, একটা ইলেক্ট্রন কীভাবে অন্ধকূপে আটকে
পড়ে ছটফট করছে, এমন একটা কূপ যার গভীরতা অনন্ত, অসীম। কিছু একটা
ছিল, তার জ্বলজ্বলে দু চোখে, নমিতা কেঁপে ওঠে। অনন্ত, অসীমের ধারণা, তার
এই ছোট ঘরে আঁটে না। সে শুধু বুঝে নেয়, তার অবস্থা ওই অন্ধকূপে ছটফট
করে মরা ইলেক্ট্রনের মতো- পার নেই, পরিত্রান নেই।
তবে সে সব প্রথম দিকের কথা। মানব্রতের নার্ভের অসুখ সদ্য ধরা পড়েছে,
ওদিকে ওর কারখানায় ঝুলেছে তালা। কোনটা আগে, কোনটা পরে, এখন মনে
পড়ে না ভাল। যদিও মাত্র কবছর আগের কথা। কাঁচা ছিল, একটু টোকা দিলেই
রক্ত ঝরত। হঠাৎ করে পুরো সংসারের ভার ঘাড়ে চেপে যাওয়ায় নমিতা চোখে
অন্ধকার দেখছিল। তবু, জীবনে গভীর নির্ভর ছিল সেসময়। সম্পর্কের বুনোট ছিল
ঘন, কোথাও ফাঁক বা ফাঁকি ছিল না।নমিতা ভাবত, মানব্রত একদিন সেরে
উঠবে, আবার সংসারের দায়িত্ব নেবে। সে আবার আগের জীবনে ফিরতে পারবে,
আগের মত ঘন, গহন দুপুর। ঘর অন্ধকার করে নিশ্চিত গেরস্ত ঘুম, শেষ
বিকেলের আলোয় চুলের জট ছাড়ানো, গা ধোয়া, কাচা শাড়ি আর সিঁদুরের
আটপৌরে সাজ, ঢিমে তেতালে সন্ধের জলখাবার আর রাতের রান্নার জোগাড়।
সবচেয়ে ওকে টানে ওই দুপুর, যা ছিল ওর নিজস্ব। খবরের কাগজটায় একটু চোখ
বুলোনো, পুরনো ম্যাগাজিনগুলো নতুন করে পড়া, তারপর মানব্রত্র কঠিন বইগুলোয়
দাঁত ফোটাতে না পেরে নেড়েচেড়ে কখন এক ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়া। সেই দুপুরগুলো
কি আর কোনদিন ফিরে পাবে নমিতা? এখন ঝড়, বজ্রপাত, ভূমিকম্প যাই হোক,
ওকে তিনটে পঁচিশ ধরতেই হবে। শিয়ালদা নর্থের লেডিস টয়লেটের আয়নায়
সামনে রোজ রোজ বদলে ফেলতে হবে নিজেকে। পেচ্ছাপ আর ফিনাইলের চোঁয়া
গন্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে ম্যাজিক ঘটাতে হবে। একদিন, প্রতিদিন। নমিতা বিশ্বাস,
কেয়ার অব মানব্রত বিশ্বাস থেকে ঋতু দাস, ফ্লাইং। শেষ ট্রেন ধরে যে ক্লান্ত,
নিঃস্ব মেয়েটা বাড়ি ফিরবে, বাইরের পাপোশে পা মুছে ঘরে ঢুক্লেই সে আবার
নমিতা বিশ্বাস হয়ে জাবে। তার জন্যে রান্নাঘরে জল দেওয়া ভাত, দুটো রুটি, ডাল
ত্রকারি- সব প্রিপাটি করে রাখা। তারি রান্না করে যাওয়া, বাবাকে খেতে দিয়ে
নিজে খেয়ে বাব্লা মায়ের জন্যে গুছিয়ে রেখেছে। ওর বিছানাও করা থাকবে।
টান্টান করে টাঙ্গানো মশারি। ভেত্রের ঘ্রে নয়, সে ঘ্রে বাবলাকে নিয়ে মানব্রত
শোয়। নমিতার বিছানা পাতা থাকে বাইরের ঘ্রে।স্বামী বা ছেলের সঙ্গে শোয়ার
অধিকার সে হারিয়েছে। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত এই আলাদা ব ন্দোবস্ত মেনে
নিতে। চোখে লাগত এই স্পষ্ট বিভাজন রেখা। এখন এটাই অভ্যেস হয়ে
গিয়েছে। আজকাল এই হাত পা খেলিয়ে একলা শোয়ার সুবিধেটুকু তার প্রাপ্য বলে
মনে হ্য়। মানব্রত যতদিন রোজগার করেছে, সারা দিন, কখনো সারারাত নাইট
ডিউটির পর সেও তো আলাদা বিছানা চাইত। নমিতাও তো একজন কর্মী।
নিজেকে এইসব বোঝানোর পরেও, প্রতিরাতের বাড়া ভাত আর পাতা বিছানা
তাকে আজ বেঁধে। নিঝুম রান্নাঘরে চল্লিশ ওয়াটের ম্যাট্ম্যাটে আলোয় বসে সে যেন
ভাত নয়, নিজের ইহকাল পরকাল খায়। মশারি তুলে শূন্য বিছানায় ঢুকতে গা
ছমছম করে, মনে হয় কে যেন ওত পেতে বসে আছে। আজকাল আর একটা
ব্যাপার বাড়ি ফেরার যন্ত্রণাকে আর বাড়িয়ে দিয়েছে। বাবলা প্রায়ই রাত জেগে।
বাগানে গেট খোলার শব্দ হলে ও-ই গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ছেলে লম্বায় তাকে
ছাপিয়ে গিয়েছে অনেকদিন। কথা বলতে গেলে ঘাড় উঁচু করতে হয়। বাবলা
রোজই দরজা খুলে দিয়ে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই চোখে চোখ
রাখতে পারে না নমিতা, মাথা নিচু করে ভেত্রে ঢুকে আসে। আজকাল বড্ড ভ্য়
করে। কোনও রাতে বাব্লা হয়তো ওর সমস্ত শরীর দিয়ে দরজা আগলে দাঁড়াবে।
ওকে ঠেলে ভেত্রে ঢোকার অত শক্তি নমিতার আজ আর নেই, না শরীরে, না
মনে। সেদিন থেকে নমিতা আর কোথাও ফিরবে না। এ রাস্তার মোড় থেকে সে
রাস্তার মোড়, ব্রিজের ওপর থেকে ছোট গলি- ও সত্যিই ফ্লাইং হয়ে যাবে।
নমিতার স্থির বিশ্বাস, সেদিনও মানব্রত এরকম বিছানায় আড় হয়ে শুয়ে বই পড়ে
যাবে। মানব্রত বেশিক্ষণ বই ধরে রাখতে পারে না, হাত কাঁপে। বেশিরভাগ সময়ই
বই বিছানায় রেখে পড়ে, ওইভাবেই ও চলে যাবে, ঘুমের মধ্যে, বইয়ে মাথা
রেখে। এই জানার প্রথম অভিঘাত যেমন ছিল, এখন আর তেমন নেই। এখন
নমিতা অনেক নির্মোহভাবে ভাবতে পারে বইয়ে মাথা গুঁজে নিস্পন্দ শুয়ে আছে
মানব্রত, তার শরীর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ক্য়েকটা দিন তিনটে পঁচিশ
ধরতে হবে না নমিতাকে। হবিষ্যান্ন খেয়ে সাদা শাড়ি পরে অশৌচ পালন করবে।
অশৌচ? নমিতা জানবে ওই কটা দিনই, সবচেয়ে শুচি, সবচেয়ে শুদ্ধ থাকবে সে।
কয়েকদিনের জন্যে ফিরে পাবে সেই দুপুরগুলো, একান্ত নিজের করে। খুব কি ভিড়
থাকবে পাশে? কে আর আছে তাদের? যারা ছিল, তারা তো আস্তে আস্তে সরে
গিয়েছে। কারখানা লক আউট আর মানব্রতর অসুখ ক্রমশ স্বজনহীন সহায়হীন
করেছে তাদের। নিত্য রুগী কে দেখে? তার ওপর নমিতার উপার্জনের উৎস
অনেকের কাছেই গোপন নেই। ভালই হয়েছে। কেউ থাকবে না পাশে। নমিতা
শান্তিতে ঘুমোবে, ঘর অন্ধকার করে।
এসবই নির্মোহভাবে ভাবতে পারে নমিতা। অথচ প্রতি দুপুরেই মানব্রতকে ফেলে
পথে বেরতে অসম্ভব কষ্ট হয় তার। যন্ত্রণায় বুকটা মুচড়ে যায়। মানব্রত বই
থেকে মুখ তোলে না, কিছু বলে না, তবু মনে হয়, মানুষটা চায়, অন্তত একটা
দুপুর নমিতা বাড়ি থাকুক। তার পাশে বসে শুনুক অণু পরমাণুর গল্প। আগে তো
শুনত। বারো ক্লাস অব্দি পড়া নমিতা গভীর বিস্ময়ে শুনত এসব, তার আলোকিত
স্বামীর মুখ থেকে। আসলে মানব্রত কোনদিনই জানবে না, অণু পরমাণু নয়,
নমিতার প্রকৃত বিস্ময়ের বস্তু ছিল তার স্বামী, ফার্নেসে এত বছর কাজ করেও
যার বিজ্ঞান-অনুরাগ ঝলসে যায়নি। সায়েন্স ক্লাবের মেম্বার ছিল বরাবর। কতবার
বিজ্ঞান-জাঠার আয়োজন করেছে। বাচ্চাদের দিয়ে মডেল বানিয়েছে। সেসব করতে
গিয়ে স্নায়ুর ওপর কী এমন অমানুষিক চাপ পড়ল যে পারকিন্সনের মত রোগ
বাসা বাঁধল শরীরে!
নমিতার মনে হয়, এই চাপ বাইরের নয়, ভেতরের, মানব্রতের নিজের তৈরি
করা। দুরূহ দুর্বোধ্য সব তত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামানোর বাতিক বরাবর। কী দরকার
এই বোঝা মাথায় নেওয়ার? বিজ্ঞানী নয়, লেখেটেখেওনা, সামান্য ছাপোষা লোক,
কারখানার কর্মী, ঘসে ঘসে যতই সুপারভাইজারি লেভেলে উঠুক, তার এই
ঘড়ারোগ সামালায় কে এখন? অভিমানে চোখে জল আসে নমিতার। ওই যে দেখো
একখানা খটোমটো বই হাতে করে শুয়ে আছে। অনেক চেষ্টা করে নামটা পড়তে
পারল ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’। হঠাত হাসি পেল নমিতার। তার কোনও কাস্টমার
যদি জানতে পারে ঋতু দাসের হাজব্যান্ড দিনরাত ঘরে শুয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স
পড়ে, কীরকম মুখের চেহারা হবে তার?
আজ ইচ্ছে করেই একটু চড়া প্রসাধন করে নমিতা, শিয়ালদা লেডিস টয়লেটে
পেচ্ছাপের গন্ধ শোঁকার চাইতে এখান থেকে তৈরি হয়ে যাওয়া ঢের ভাল। আর কী
গোপন করার আছে তার? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক বুলোতে
বুলোতে নমিতা ভাবল সে তো সত্যি সত্যি ফ্লাইং নয়, তার ফেরার মত একটা
ঘর আছে, এখনও। শাড়ির প্লিট ঠিক করতে করতে ভেতরের ঘরে এল আবার।
রোজই যেমন বলে যায়, বিকেলের জলখাবার আর রাতের রুটি তরকারি কোথায়
কী আছে, কোনটা ফ্রিজ থেকে বার করতে হবে, কোনটা ঢোকাতে হবে ফ্রিজে
এইসব। তারপর বলল ‘আমি তাহলে বেরোচ্ছি।‘
মানব্রত এসব আদৌ শোনে কি না, কোনদিনই টের পাওয়া যায় না তা। যদিও
এই চুপচাপ থাকাটা যে ওর অসুখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তা নমিতা বেশ
বোঝে। আসলে এটাই ওর ঘ্রৃণা, অসহযোগ, প্রতিবাদ। হয়তো ফ্লাইং কর্মী ঋতু
দাসের সঙ্গে কথা বলতে তার শ্রেণি অভিমানে লাগে। আজ হঠাত কী হল, মানব্রত
মুখ তুলে তাকাল। তার সেই আয়ত, অলৌকিক দৃষ্টি যা নমিতাকে এক মুহূর্তে
অবান্তর করে দেয়। কথা যখন বলল, মনে হল যেন কণ্ঠস্বর দিয়েই আদর করছে
নমিতাকে।
‘জানো তো হাইজেনবার্গ কী বলেছেন? একটা চলমান কণার অবস্থান আর গতি
কখন একসঙ্গে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ভাবো তো, এই প্রকাণ্ড বিশ্বে, তুমি
ছুটছ, সবাই ছুটছে, কী ভয়ানক অনিশ্চয়তার মধ্যে!’
নমিতা কিছু যেন শুনতে পাচ্ছিল না, ওর ভেতরটা থরথর করে কাঁপছিল। ও
চিৎকার করে বলতে গেল ‘কিছুই কি নেই, যা স্থির, নিশ্চিত?’ গলা দিয়ে কোন
স্বর বেরোল না। ওর হঠাত মনে হল, আজ সেটা ঘটবেই। যে ভয় নিয়ে সে
রোজ দুপুরে বেরয়, ফিরে এসে যা দেখার ভয় করে। সেটা যে কী, তা অবশ্য
স্থির করে ভাবতে পারল না সে। বইয়ে মাথা রেখে নিস্পন্দ মানব্রত, নাকি দরজা
আগলে দাঁড়ানো বাবলার বিশাল শরীর… সে মানব্রতকে ছুঁতে গেল। মনে হল
তার এই উড়ুক্কু জীবনে মানব্রতই একমাত্র স্থির বিন্দু। মানব্রত আবার সেই আগের
ভঙ্গিতে ফিরে গেছে। নমিতা অকে ছুঁতে পারল না। সে প্রায় দৌড়তে দৌড়তে,
নাকি উড়তে উড়তে বেরিয়ে গেল ভেতরের ঘর থেকে বাইরের ঘরে, দরজা থেকে
রাস্তায়। তিনটে পঁচিশ ধরতেই হবে। দূর থেকে তার উড়ুক্কু শরীর, একটা চলমান
ফুটকির মতই দেখাচ্ছিল। সেই ফুটকিটা একসময় অন্য ফুটকির সঙ্গে মিশে গেল।
মানব্রত তখন ঘুমিয়ে পড়েছে।