মোহিত কামাল
‘এক ভুল চলে গেলে আরেক ভুলের দিকে যাই,
পা বাড়াই, ভুলের ভয়ংকর ভিড়ে নির্ভাবনায়।
দুশ্চিন্তাহীন, দ্বিধাহীন যাই।
ভুলকে ভুল ভেবেই ভুলের দিকে যাই।’
ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজের ছেঁড়া টুকরোয় ছাপানো কবিতাংশের ‘ভুল’ শব্দটির ওপর চোখ স্থির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থমকে দাঁড়াল বেণু। হাঁটু গেড়ে বসে ডান হাতে তুলে নিল রঙিন গ্লসি পেপারের ছিন্ন টুকরোটা। বসা অবস্থায় চোখ দ্রুত ঘুরে-ফিরে চষে বেড়াল কালো অক্ষরের বুননে মায়াজালের ভেতর। প্রতিটি শব্দ চমকে দিল ভেতর-বাহির। এ অপূর্ব কবিতাংশের কবি কে? প্রশ্নটির জেগে ওঠার ধরন কাঁপন জাগাল বুকে। বসা থেকে উঠতে উঠতে কাগজের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কয়েকবার ঝাঁকি দিল। তবুও লেগে থাকল ময়লা। এবার ছিন্ন কাগজটি কামিজের সঙ্গে ঘঁষে নিল। সেঁটে থাকা ময়লা তবুও লেগে আছে। ময়লাযুক্ত ছেঁড়া কাগজটা আবার তুলে ধরল চোখের সামনে। ছিন্নাংশের নিচের অংশে বাঁ থেকে ডানে রয়েছে লম্বা একটি সরলরেখা। সরলরেখার নিচে লেখা ‘৪০ আমার সময়’। লেখার ডিজাইন দেখে বুঝতে পারল ৪০ হচ্ছে পৃষ্ঠা সংখ্যা। যেহেতু ডানে বাংলায় লেখা ‘আমার সময়- নিশ্চয় ৪০ মানে চল্লিশ, আশি নয়। অর্থাৎ আমার সময় পত্রিকার চল্লিশতম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে কবিতাটি। হঠাৎ বেণুর মনে পড়ে গেল কলকাতা থেকে প্রকাশিত বব রয় সম্পাদিত সময় সাহিত্য পত্রিকার কথা। এই ম্যাগাজিনে ‘আমার’ শব্দটি লেখা থাকে ছোট করে; ‘সময়’ শব্দটির বুক চিড়ে ছাপানো আমার শব্দটি প্রথম দেখায় নজরে পড়ে না। এর একদম উপরে লেখা থাকে THE TIMES OF INDIA। সূত্র খুঁজে পেয়ে বুকের ভেতর স্বস্তি জাগল। ‘কবি কে?’ প্রশ্নটি যেভাবে কাঁপন জাগিয়েছিল, ম্যাগাজিনের সূত্রের সন্ধান পেয়ে কাঁপনের বদলে এবার মনে ধেয়ে এল স্বস্তি। উৎফুল্লতা টের পেল বেণু। প্রফুল্ল মনে আবার পড়ল কবিতাংশটি। অপূর্ব! অসাধারণ! অনুভূতির জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করে বাসার দিকে অগ্রসরমান বেণু ঘুরিয়ে নিল নিজের যাত্রাপথ। সামনে রয়েছে জ্ঞানকোষ বুক-স্টল। দেশ-বিদেশের সব ম্যাগাজিন পাওয়া যায় সেখানে। সময় ম্যাগাজিনটি কেনার লোভ সামলাতে পারল না ও এ মুহূর্তে। মনে হতে থাকে, পুরো কবিতাটি না পড়তে পারলে বৃথা হয়ে যাবে জীবন। জানতেই হবে কবির নাম। পড়তেই হবে পুরো কবিতা। ভেতরের এমনি তাড়নায় সামনে এগোতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়াল। রাস্তার পাশে রয়েছে পর পর দুটো আমগাছ। গাছের দিকে চোখ গেল। একগাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ঝুলে আছে গুটিআম। চৈত্রের শুরুতে এই গুটি আমের সারি বলে দিচ্ছে দেশে এবার বাম্পার ফলন হবে আমের। সম্ভাবনার উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে গেল পাশের গাছটি দেখে। পোকার আক্রমণে শুকিয়ে গেছে ওই গাছের মুকুল। একদিকে প্রকৃতির লাবণ্য; অন্যদিকে প্রকৃতির শুষ্কতা, প্রতিকূলতা! দুয়ের পাশাপাশি অবস্থানের মোজেজা কী! বুঝে ওঠার আগেই অভিমানী কবি সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ল :
‘একবার গায় হাত রাখ,
একবার ছুঁয়ে দে ভরকেন্দ্র
এই দ্যাখ আমি আগুনকে
বরফ করেছি আর বরফকে আগুন।’
কোন আগুনের কথা বলছেন সুপর্ণা? পুরুষ-আগুন? পুরুষ-আগুন কি নারীর ছোঁয়ায় বরফ হয়ে যায়? পুরুষের ছোঁয়াতেই কি বরফ-নারীর মাঝ-শরীর-দরিয়ায় বয়ে যায় অগ্নিলাভা? নারী-পুরুষ-প্রকৃতির মধ্যে বরফ, আগুন আর শুষ্কতা ও সজীবতার মধ্যে মিল কোথায়? আদৌ কি কোনো মিল রয়েছে দুইয়ের মধ্যে? প্রশ্ন ভরা বুকে এসে ও দাঁড়াল জ্ঞানকোষের সামনে। আমার সময় ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যা হাতে নিয়ে চল্লিশতম পৃষ্ঠা উল্টে চমকে গেল বেণু। এই পাতায় ছাপা হয়েছে তসলিমা নাসরিনের ‘ভুল মানুষ’ কবিতা। কবিতার শেষাংশটাই পেয়েছে ছেঁড়া কাগজের টুকরোয়। ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে পুরো কবিতা পড়ল বেণু। মাঝের আর একটি লাইনে চোখ বসে গেল-‘ভুল মানুষকেই খুঁজি, নিতান্তই যদি খুঁজি।’ তসলিমার কবিতার এই অংশকে বেণুর মনে হলো নিজের কথা। কোনো এক গোপন জাদুর চালে কবি জেনে ফেলেছেন নিজের উপলব্ধি। সেটাই প্রকাশ করেছেন কবিতায়। এমন মিলে যেতে পারে অন্তঃমিল ভাবনা! কবির মননে কি তবে বদল ঘটছে? নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করতে পারছেন তিনি? নিজের ভুল ধরতে পারছেন?
সাহিত্য মাসিক পত্রিকাটি কিনে বাসার দিকে রওনা হলো বেণু।
স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর আটাশ বছর বয়সে বেণুর চারপাশ ভরে উঠেছে নীরব শূন্যতায়। শূন্যতা আর পূর্ণ হয় না। কোনো দিকে হাত বাড়াতে চায় না সে। অসংখ্য হাত এগিয়ে আসে তার দিকে। বোঝে, হাতগুলোর মধ্যে রয়েছে অপূর্ণতা, অদৃশ্য অবিশ্বস্ততা। শূন্যতা পূর্ণ হোক অবিশ্বাসে, চায় না ও। অবিশ্বাস আঘাত হানে বার বার, তবুও দাঁড়িয়ে থাকে। ভাঙতে ভাঙতে ধসে গেলেও ভেসে যায়নি। মাথা উঁচিয়ে বার বার দাঁড়িয়েছে। দাঁড়াতে হবে ভবিষ্যতে। এ সংকল্পের শক্ত গিঁট টের পেল মনে। শক্ত আবরণের ভেতর কোমল স্রোত চলে নিরবে। সেই নিরবধ্বনি শুনতে চায় না সে। শুনেও না শোনার ভান করে এগোচ্ছে জীবনপথে। কোন পথে যাচ্ছে, জানে না। উদ্ধত মাথা হঠাৎ ঘুরে গেল ডানে। কোথায় যাচ্ছ? প্রশ্নটি এসেছে ডান থেকে। কণ্ঠটা বড় বেশি চেনা লাগছে। মাথা ঘুরিয়ে দেখল তাপসকে। সঙ্গে সঙ্গেই যেন জ্যোৎস্নাপাখির ঝাঁক ডানা ঝাপটে উড়ে এসে বসল বুকের মধ্যে বেড়ে ওঠা সাদা সজনেফুলের ঝাড়ে। কবিতার হৃপিণ্ডের মধ্যে হৃদক্রিয়া চলতে শুরু করেছে বুকের ঘরে। অপলক কবিতার স্বর শুনতে পেল। কবি সুপর্ণার কবিতার বাকি অংশটুকু বুকের গিটারে বেজে উঠল আবার :
‘একবার ছুঁয়ে দে শস্যগর্ভ,
পাপড়ি-বুক, এই আমি দিব্যি
করছি, আর সব বুঝেও
তোকে ভালোবাসি বলব
না। একবার হাত রাখ গায়,
দ্যাখ, সমস্ত শিশির নদী হয়ে
বয়ে যাচ্ছে মাঝ-শরীর-দরিয়ায়।’
স্তব্ধ, অপলক তাকিয়ে থাকা বেণুকে আবার প্রশ্ন করল তাপস, ভালো আছ?
স্বর বেরোল না বেণুর কণ্ঠ থেকে। বুকের ভেতর বেড়ে ওঠা সাদা সজনেফুলের ঝাড় একবার কেঁপে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে উড়াল দিল জ্যোৎস্নাপাখির ঝাঁক। জমে থাকা শিশির সুযোগ পেল না নদী হওয়ার। মাঝ-শরীর-দরিয়ায় চট করে জেগে উঠল শুষ্ক চর। প্রকৃতির লাবণ্য ও শুষ্কতার অর্থ টের পেয়ে গেল বেণু। গুটি আম ও শুষ্ক মুকুল কেন আছে পাশপাশি; বিষয়টি ছলকে বার্তা প্রেরণ করে দিল মনের পর্দায়। আলোহীন চোখে একদম স্বাভাবিক গলায় বেণু জবাব দিল, ভালো আছি। তুমি?
‘ভালো আছি’-র মধ্যে প্রাণ নেই। টের পেল না বেণু। টের পেল তাপস। ‘তুমি?’ প্রশ্নের মধ্যেও কোনো জিজ্ঞাসা নেই। উত্তর জানার তাড়না নেই। প্রশ্নের হৃদয় নেই। উত্তরেরও হৃদয় খুঁজে পেল না তাপস। প্রতিক্রিয়াহীন সহজ গলায় তবুও তাপস জবাব দিল, ভালো আছি।
আর কোনো প্রশ্ন নেই। আর কিছু জানার নেই। এগোতে লাগল বেণু।
তাপস প্রশ্ন করল, একটু দাঁড়াবে? দুটো কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে।
জবাব দিল না বেণু। ফুটপাতের সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সুবোধ মেয়ের মতো বলল, দাঁড়ালাম। বলো, কী বলবে?
কী বলব, জানি না। তোমাকে দেখে কথা বলার ইচ্ছা হলো।
বেণু বলল, আমার ইচ্ছা হচ্ছে না। যাই?
ইচ্ছা না হলে চলে যাবে। বাধা দেব না। অনুমতি চাচ্ছ কেন?
ওঃ! সরি।
সরি হওয়ার কিছু নেই। তোমাকে প্রশ্ন করার জন্য আমারই ‘সরি’ বলা উচিত।
থ্যাংকস ফর গুড রিয়েলাইজেশন। কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে একবার ঘুরে দেখার ইচ্ছা হয়েছিল তাপসের মুখ। ইচ্ছাটা শাসন করে এগোতে লাগল বেণু। একসময় বিষের ছোবল দিয়েছিল তাপস। মনে হচ্ছে বিষক্ষয়ে ক্লান্ত হয়নি নাগ; বীণ ছেড়ে পালাতে চায় না, এখনও কি বিষ ভরা পাত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়? এখনও পদচিহ্ন বসিয়ে দিতে চায় শূন্য কোনো বুকে?
তাপসের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের কথা মনে পড়ল। পাঁচ বছরের সম্পর্ক কেড়ে নিয়ে একদিন বলেছিল, ‘সফল বিয়ে মানে একই ধর্মের সম্পর্ক।‘ বলেছিল, ‘বিয়েতে শেষ হয়ে যায় ভালোবাসা। ভালোবাসার শেষ মানে বিয়ে নয়। ভালোবাসার মৃত্যুই হচ্ছে বিয়ে।’
পাতালের শেষে সীমানায় মিশে গিয়েছিল বেণুর পথ। অন্ধকার পথে নাকে পেয়েছিল নির্মম বারুদের ঘ্রাণ। জ্বলে ওঠা বারুদের আলোয় বিদ্ধ হয়েছিল নিজের চোখের আলো। সেই আলো নিভে গিয়েছিল, নিভে গিয়েও জ্বলে উঠেছিল : বুঝেছিল, ঠিকই বলেছে তাপস। তবে, বড় বেশি দেরিতে বলেছে। এভাবে দেরি করাই কি পুরুষ-নাগের বড় বৈশিষ্ট্য? প্রশ্ন নিয়ে এগোতে লাগল বেণু। আরও প্রশ্ন জাগে, কত মেয়ের বুকে ছোবল বসাচ্ছে নাগ? ‘ভালোবাসার মৃত্যুই হচ্ছে বিয়ে’আর কত জনকে বলবে সে?
ভুলের পদচিহ্ন মুছে যায়নি বুক থেকে। তাপসের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বিয়ের তিন বছরের মাথায় জেনে গেল রাকিব, বেণুর স্বামী। তালাক হওয়ার পূর্বেই সংসার আলো করে আসে তাসনুভা। ফুলের মতো মেয়েটি বাবার আদর পাওয়ার সময়কালে বঞ্চিত হচ্ছে বাবার মমতা থেকে। পুরোনো দিনের পদচিহ্ন কি তবে ক্ষত তৈরি করে যাবে জেনারেশন থেকে জেনারেশনে? তাসনুভা বলে, আব্বুর কাছে যাব। আব্বুর কাছে যাব।
তাসনুভার কথা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধরনের তাড়না টের পেল বেণু। বেড়ে গেল পায়ের গতি। মনে হতে থাকে- শি হারসেল্ফ ইজ অ্যান অনারেবল মাদার অব অ্যান ইনোসেন্ট ডটার। সেই মাকে অপমান করার, মলিন করার কোনো অধিকার নেই তার। জীবননাগের শঙ্খ নিনাদ ভেদ করে এগোতে হবে মাথা উঁচিয়ে। বিষের যন্ত্রণামুক্ত হতে হবে, বিষমুক্ত জীবন উপহার দিতে হবে তাসনুভাকে।
রাকিবের ছেড়ে যাওয়া মেনে নিতে না পারলেও সহজ হয়ে গেছে বেণু। রাকিবকে আর দোষ দিতে পারে না। এক রোমান্টিক মুহূর্তে নিজেই বলে ফেলেছিল তাপসের কথা। তাপসের কথা শুনে বিষের ছোবল খেয়েছিল রাকিব। ভেবেছিল হাজবেন্ডের কাছে সত্যবাদী হবে, সৎ থাকবে। সৎ থাকতে গিয়ে পুরোনো কথা বলে দেওয়া যে বিষের ছোবল দেওয়া, বুঝে ওঠার আগেই নীল হয়ে গিয়েছিল রাকিব। সেই রাকিব আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। প্রচণ্ড ঘৃণা বুকে নিয়ে ডিভোর্স দিয়েছিল বেণুকে। তাসনুভার কথা ভাবেনি তখন। এখন ভাবে। কাঁদে। দেখার জন্য ব্যাকুল হয়। বাধা দেয় না বেণু। নিজেকেই দোষী ভাবে আর মনে মনে বলে, রাকিব ইজ অ্যান অনারেবল ফাদার অব তাসনুভা। সেই চেয়ারে সে অনেক উপরে। অনেক শ্রদ্ধার। তাসনুভার বাবার জন্য শ্রদ্ধার ঘাটতি নেই। স্বামীর জন্য হাহাকার বুকের ঘরে তালা দিয়ে রেখেছে, তাসনুভার বাবার জন্য শ্রদ্ধার পাত্র খোলা রেখেছে। বেণুকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন নীল হয়ে ওঠে রাকিব। রাকিবের ক্লান্ত নীল মুখ দেখা থেকে পরিত্রাণ চায় সে। এড়িয়ে চলে রাকিবকে। যেদিন তাসনুভাকে দেখতে আসার কথা, সেদিন বাসা থেকে দূরে থাকে। আজও রাকিব আসার কথা। মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বাবার। এই বাবা-মেয়ের মমতার সাঁকোটি মজবুত রাখতে চায় বেণু। এ মুহূর্তে রাকিবের কথা মনে পড়ার সঙ্গে তীব্র রোষ জেগে উঠল তাপসের প্রতি। মাথা ঘুরিয়ে দেখতে চাইল তাকে। তীব্র ইচ্ছাটা আবার ঠেকাল। গহীন ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল, কেন তাপসের সঙ্গে অতীত সম্পর্কের কথা বলতে গেলে রাকিবকে? পুরোনো সত্য এড়িয়ে গেলে না কেন? কেন সৎ হওয়ার চেষ্টা করলে? এ সততা যে নির্মম মূর্খতা, কেন বুঝলে না? প্রশ্নগুলো কাবু করে ফেলল বেণুকে। নতমুখে এবার এগোতে লাগল বাসার দিকে। গোপন একটা লোভ কাজ করে- রাকিবের সঙ্গে দেখা হওয়ার ইচ্ছা দুর্নিবার হয়ে ওঠে। দুর্নিবার ইচ্ছাটি বুকে কামড় বসিয়ে দিল। নিজেকে মনে হচ্ছে শুকনো মুকুল। প্রকৃতির সবুজ গুটি আম মনে হতে লাগল তাসনুভাকে। এই আম বেড়ে ওঠুক। এ আম আলো পাক। বাতাস পেয়ে লাবণ্যময় হোক। বুকের ভেতর থেকে দুরন্ত কামনা ছুটে আসে, ঘোর তৈরি করে মনে; আটকে দিল নিজের পায়ের গতি। মনে হতে থাকে, আরও বেশি সময় থাকুক রাকিব; মেয়ের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাক। বেণুকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে যাবে রাকিব। ঘৃণায় ছুটে পালাবে মেয়ের সামনে থেকে। ঘৃণার বিষ বুকে পুরে উদ্দেশ্যহীন বেণু তাকিয়ে রইল খোলা আকাশের দিকে- আকাশে রোদ। ঝলমলে রোদ। চৈত্রের কড়া রোদ ধুয়ে দিচ্ছে বুকের বিষ। রোদেস্নান করতে ইচ্ছা করছে। ধুয়ে নিতে ইচ্ছা করছে মন। কংক্রিটের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছাটা বাড়তে থাকে। পদচিহ্ন টের পায় না কংক্রিটের পথ, দাগ বসে না পথে। এমন পথই ও কামনা করে মনে মনে। এটা কি ভুল পথ? নাকি শুদ্ধ পথ? জানে না বেণু। ভুল হলেও ভুলকে শুদ্ধ ভেবে এগোতে চায় সে। সামনে… আরও সামনে…