চন্দন চৌধুরী
মরুভূমি দিয়ে হাঁটছিল দুই পথিক। তপ্ত বালি, অসহ্য গরম তাদের ক্লান্ত করে দিচ্ছিল। এর মধ্যে একজনের একটি জুতো ছিঁড়ে গেল। সেটি এমনভাবে ছিঁড়ল ঠিক করে পুনরায় পরার আর উপায় রইল না। অন্যজন বলল, ‘এখন হাঁটবে কী করে? বালি তো আগুনের মতো গরম। পায়ে একেবারে ফোস্কা পরে যাবে।’
ছেড়া জুতোর পথিক হাঁটতে চেষ্টা করল। কিন্তু পারলো না। হাঁটতে গিয়ে তার মনে হলো সে বুঝি আগুন দিয়ে হাঁটছে। দ্বিতীয় পথিক তখন একটা বুদ্ধি দিল, ‘পায়ে কাপড় পেঁচিয়ে নাও।’ তাই করল প্রথম পথিক। সেটা করে সে হাঁটছিল আর কাঁদছিল।
দ্বিতীয় পথিক বলল, ‘এখন তো বেশ হাঁটতে পারছ। তাহলে কাঁদছো কেন?’ প্রথম পথিক বলল, ‘জুতোটার জন্য কাঁদছি।’
‘একটা জুতোর জন্য মানুষ কাঁদে!’
প্রথম পথিক বলল, ‘এই জুতোটা, যেটা আমার পায়ে আছে, মরুভূমি পার হলেই ফেলে দিতে হবে। কারণ ওই জুতোটার অভাবে এটিও অদরকারি হয়ে গেল। আগে আমি এভাবে ভাবিনি।’
দ্বিতীয় পথিক বলল, ‘তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।’
তখন প্রথম পথিক বলল, ‘আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল সে আমাকে জুতোর মতো ভালোবাসে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছিলাম। আর সেদিনই আমি ঘর ছেড়ে বের হয়ে পথিক হয়ে গিয়েছিলাম। আজ এই জুতো বুঝিয়ে দিল, কতটা ভুল করেছিলাম আমি।’
দ্বিতীয় পথিক বলল, ‘একটা জুতো অন্য জুতোটার জন্য সারাজীবনই অপেক্ষা করে। এই মরুভূমি পার হয়ে তুমি তোমার জুতোর কাছে ফিরে যেও।’